ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​রংপুরে ঠাণ্ডায় শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৫-০১-২০২৫ ০৫:০৭:৩৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৫-০১-২০২৫ ০৫:০৭:৩৫ অপরাহ্ন
​রংপুরে ঠাণ্ডায় শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে ​সংবাদচিত্র : সংগৃহীত
উত্তারাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। ভোর ও সন্ধ্যার পরপরই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে জনজীবন। এমন বৈরী আবহাওয়ায় ঠাণ্ডাজনিত কারণে বেড়েছে নানা রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। শুধু রংপুর নয় এম চিত্র পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধাও দেখা যাচ্ছে। এইসব জেলাগুলোতে শীতের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।  

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও দেখা যায় এমন চিত্র। রোগীদের বেশিরভাগ শিশু, যারা ডায়রিয়া আক্রান্ত। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ভিড় করছেন বাবা-মায়েরা। সকাল হলেই হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে শতাধিক শিশু ভর্তি রয়েছে। কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে কোল্ড ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি।

এদিকে মেডিক্যালের বহির্বিভাগে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে আসছেন হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখাতে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত এক শিশুর অভিভাবক রহিমা বেগম জানান, তার সন্তান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এখন ভালো অবস্থায়। দুদিন আগে খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। ৬ মাস বয়সী শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে।তবে চিকিৎসা সেবা ভালো হচ্ছে।

মেডিক্যালের পাশাপাশি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। এসব রোগীর মধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্তরাই রয়েছেন। গত কয়েকদিনে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই চিত্র। সেখানেও ভর্তি রোগীর মধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্তই বেশি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, ‘শীতের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে বেশিরভাগই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ায় শীতজনিত রোগের কারণে গত তিন দিনে প্রায় ২০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, জন্ডিস, সর্দি-জ্বরসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বয়স্করা আসছেন। শীতজনিত রোগীর চিকিৎসা দিতে বহির্বিভাগে নেবুলাইজার মেশিনসহ স্যালাইন ও জিংক রাখা হয়েছে। জটিল মনে হলে মেডিক্যালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাকির মুবাশ্বির বলেন, ‘এখন শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে বেশিরভাগ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। খুবই জটিল মনে হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ  দেওয়া হচ্ছে।’

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্টার ডা. আ ন ম তানভীর চৌধুরী বলেন, ‘শিশু রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, তবে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশুরা সবসময় চিকিৎসা নিলেও এবারে কোল্ড ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরা বেশি ভর্তি হচ্ছে। এজন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের খাবার গ্রহণের সময় হাত ভালোভাবে ধৌত করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।শিশুদের গরম পানি সবসময় খাওয়ানো উচিত।’

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে। এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে, বেশি অসুস্থ মনে হলে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসক সংকট তারপরেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আর প্রতিদিন হাসপাতালে ১৯০০ থেকে ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। অতিদ্রুত এ সংকট দুর করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এ সময় বেশি পড়া রোগীরা আসছেন হাসপাতালে। জনগণের প্রতি আহ্বান আগুন পোহানো থেকে বিরত থাকার আর গরম কাপড় পরিধান করার।’
 
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ